আকিকা কি বাধ্যতামূলক আকিকা কি ও কেন

 আকিকা কি এবং কেন দিতে হয়?

 আকিকা করার নিয়ম কি ?

আকিকার যাবতীয় মাসআলা।

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারিম আম্মা বাদ।

আকিকা কি এবং কেন দিতে হয়?



আকিকা কি বাধ্যতামূলক

উত্তর হল, সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় অর্থে এবং নিজের আনন্দ প্রকাশ করার জন্য আল্লাহর সন্তুষ্ট চিত্তে কোন পশু জবাই করা এটাই হচ্ছে মূলত আকিকা।

অর্থাৎ আল্লাহ যে আপনাকে সন্তান দান করেছেন এজন্য আপনি খুশি হয়ে আনন্দ প্রকাশ করবেন এবং এই আনন্দে চিত্তে আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে পশু জবাই করবেন অর্থাৎ আকিকা করবেন। আর এটাই হচ্ছে মূলত আকিকা।

আকিকা কেন দেওয়া হয়?

উত্তর: আকিকা দেওয়ার কারণ হলো সন্তানকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা কুমন্ত্রণা /যাবতীয় বালা মুসিবত ও রোগ ব্যাধি থেকে হেফাজত রাখার জন্যই দেওয়া হয়। হাদিসের মধ্যে বলা হয়েছে একজন সন্তান আকিকা দেওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আকিকার নিকট বন্ধক থেকে। অর্থাৎ যখন আকিকা দেওয়া হয় তখনই সন্তান আকিকা থেকে মুক্তি পায়। অর্থাৎ এই আকিকা দেওয়ার মাধ্যমে সন্তানকে যাবতীয় বালা মুসিবত থেকে হেফাজতে রাখা হয়।

অর্থাৎ আকিকা হলো ঢাল স্বরূপ।

আকিকার নিয়ম কি: উত্তর: আকিকার নিয়ম হলো, আকিকা সপ্তম দিনে দেওয়া।

আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে ১৪ তম দিনে। তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে ২১ তম দিনে।।

তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে পরবর্তীতে দিতে পারবেন।

আকিকা কিভাবে করবেন: উত্তর: ছেলে হলে দুইটা পশু আর মেয়ে হলে একটা । তবে কারো যদি দুইটা পশু আকিকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য না থাকে তাহলে সে একটা পশু দিয়ে আকিকা করতে পারবে।

তিরমিজির বর্ণনায় এসেছে,

 নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

 হযরত হাসান রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু এর ক্ষেত্রে একটা পশু দিয়ে আকিকা করছেন। তবে উত্তম হলো দুটি পশু দিয়ে আকিকা করা।

আবার অনেকে প্রশ্ন করে থাকি আমরা যে আকিকা করবো ছেলে মেয়ের ক্ষেত্রে পশু গুলো কি নর হবে না নারী হবে?

উত্তর: এই ব্যাপারে উম্মে কুরস নবীজির একজন মহিলা সাহাবিয়া। নবীজিকে প্রশ্ন করেছেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা যে আকিকা করব এটা কেমন পশু হবে?

নবীজি বললেন শোনো তোমরা  যে আকিকা করবা ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক ছেলের পক্ষ থেকে দুইটা পশু আর ওই দুইটা পশু ছেলে ও হতে পারে মেয়ে ও হতে পারে।

আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটা পশু এটাও নর হতে পারে মাদি (নারী) ও হতে পারে।

আবার অনেকে প্রশ্ন করে থাকি যে,

কোন ব্যক্তির যদি আকিকা দেওয়া না হয়

তাহলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে তার

আকিকা দেওয়া যাবে কিনা?

উত্তর: অবশ্যই দেওয়া যাবে,

কারণ বাইহাকী শরীফের হাদিসে এসেছে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, নিজে নবুওয়াত প্রাপ্তের পর, নিজের জন্য আকিকা করেছেন।

তাহলে এই হাদিস থেকে বোঝা যায় প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও নিজের আকীকা নিজে করতে পারবেন।

আবার আমরা অনেকেই প্রশ্ন করে থাকি আকিকার গোস্ত পিতা-মাতা খেতে পারবে কিনা?

উত্তর: জি পিতা মাতা দাদা-দাদী নানা নানী আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশী গরিব মিসকিন এমনকি যার জন্য আকিকা করা হয়েছে সেও  গোস্ত খেতে পারবে।

আমাদের সমাজে ভুল ধারণা রয়েছে তা হলো আকিকার গোসত বাবা-মা খেতে পারবে না,যার জন্য আকিকা করা হয়েছে সে খেতে পারবে না এটা একটা ভুল ধারণা।

এইসব ভুল ধারণা থেকে আল্লাহ পাক আমাদেরকে হেফাজত করেন।

আকিকার পশু জবাই করার দোয়া পড়া সুন্নাত।

দোয়াটি হলো

اللهم هذه عقيقة فلان دمها بدمه، ولحمها بلحمه،وعظمها بعظمه، وجلدها بجلده، ما شعرها بشعره،اللهم اجعلها ف لفلان من النار، بسم الله الله اكبر

বিশেষ দ্রষ্টব্য: فلان শব্দের ওখানে বাচ্চা ও বাচ্চার বাবার নাম বলবেন।

তবে 

কেউ যদি আরবি দোয়া না পারেন, তাহলে সেক্ষেত্রে :হে আল্লাহ অমুকের ছেলে অমুকের পক্ষ হতে তোমার অস্তে আকিকার পশু জবাই করিতেছি

বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার এই বলে পশুর জবাই করবেন।

আর গোশত বন্টন করার বিষয়ে

আমরা সাধারনতা বলে থাকি যে কোরবানির গোশত যেভাবে বন্টন করা হয় ,আকিকার গোশত সেভাবেই বন্টন করা হয়।

তবে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদিস থেকে সুনির্দিষ্ট ভাবে এত ভাগ এত ভাগ করে বন্টন করতে হবে এমন কোন বর্ণনা নেই।

তবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর আমল থেকে, সাহাবীদের আমল থেকে, এতটুকু বোঝা যায় যে, কোরবানির গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে আমরা যে রীতিনীতি অনুসরণ করে

গোশতকে তিন ভাগ করে থাকি:সেটা হল মোস্তাহাব।

তেমনিভাবে আকিকার গোসত বন্টনের ক্ষেত্রে ও তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

এই ক্ষেত্রে উত্তম হলো আকিকার গোশত রান্না করে আত্মীয়-স্বজন গরিব মিসকিন পাড়া-প্রতিবেশীদের কে সাথে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে সবাই মিলে খাবে।

আশা করি বুঝতে পারছেন

আল্লাহ পাক আমাদেরকে আকিকার সঠিক নিয়ম বুঝার তৌফিক দান করুন আমিন 🤲


আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ ,নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মা বাদ,প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা এই রমজানের রোজা শুধু আমাদের উপরে ফরজ? নাকি আমাদের পূর্বে নবী রাসুল যারা ছিলেন তাদের উপর ও ফরজ ছিল, প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা এই রমজানের রোজা আমাদের উপর  অর্থাৎ উম্মতি মুহাম্মদ এর উপর সরাসরি ফরজ হয় নাই, এই রমজান কে আল্লাহপাক আমাদের উপর পর্যায়ক্রমে চারটি ধাপে ফরজ করেছেন,



(1)প্রথম ধাপ হলো অভ্যাস,আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর বর্ণনা, আন্নান নাবিয়্যা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, কানাইয়া সুমু সালা ছাতা আই ইয়ামিন মিন কুল্লি সাহারিন।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক মাসে তিনটি রোজা রাখতেন, আর এই আমল  দেখে সাহাবায়ে কেরাম ও রোজা  রাখতেন

আর এভাবেই নবীজির আমলের মাধ্যমে  নবীজির উম্মতের ওপর অর্থাৎ আমাদের উপর  আল্লাহপাক  রোজা রাখার অভ্যাস করাইলেন, আর তখনো রমজানের রোজা ফরজ ছিল না

  আর  এটাই হল প্রথম ধাপ

(2) দ্বিতীয় ধাপে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন  উম্মাতি মুহাম্মাদীর উপর অনেকগুলো রোজা ফরজ না করে, আল্লাহ একটি রোজা ফরজ করেছেন,আর সেটা হলো মহররমের দশ তারিখের রোজা, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর বর্ণনা বুখারী শরীফের বর্ণনা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় গেলেন এবং সেখানে দেখলেন যে, ইহুদীরা মহররমের দশ তারিখ আশুরার রোজা রাখেন , নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কে প্রশ্ন করলেন মা হাযা? এটা কি?

তারা জবাব দিলো এটা একটা সম্মানিত দিন,আর এটা এমন একটা দিন যেই দিনে আল্লাহ বনী ইসরাইলকে তাদের শত্রু ফেরাউন বাহিনী থেকে মুক্তি দান করেছেন,

 তাই শুকরিয়া আদায় করার জন্য এই দিনে মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রেখেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ও, তাই তোমরা ও রাখো?তারা জবাব দিলো জী তাই আমরাও রাখি।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন 

আনা আহাককু বি মুসা মিনকুম(অর্থাৎ  তোমাদের চাইতে আমি মুসা নবীর বেশি কাছাকাছি)

তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহররমের দশ তারিখে রোজা রাখলেন, এবং সাহাবায়ে কেরাম দের কে ও মহররমের দশ তারিখে রোজা রাখার আদেশ করলেন

আর তখন থেকেই সাহাবায়ে কেরাম  দের উপর মহররমের দশ তারিখের রোজা রাখা ফরজ হয়ে গেল,

আর এটা হলো রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগের ঘটনা,

তার মানে কিন্তু এই নয় যে এখনো দশ তারিখের রোজা ফরজ

আর এটা হলো দ্বিতীয় ধাপ।

(3) তৃতীয় ধাপ হলো,সূরায়ে বাকারার 183 নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন arbi

কিন্তু এই তৃতীয় ধাপে ও একটু ছাড় আছে,আর সেই ছাড় টা হলো

আল্লাহ পাক বলেন,যারা রোজা না রেখে মিসকিন দের কে টাকা দেওয়ার অথবা মিসকিন দের কে খাওয়ানোর সামর্থ্য রাখে ফিদিয়া হিসেবে খাওয়াবে ।

তাহলে তৃতীয় ধাপে রোজা রাখা ফরজ হলেও কিন্তু আল্লাহ ছাড় দিয়েছেন, আবার অপশন দিয়ে ছিলেন যে, তোমরা যারা রোজা না রেখে গরিব মিসকিনদের কে খাওয়ানোর সামর্থ্য রাখ, তাদের, গরিব মিসকিনদের কে খাওয়ানোর চেয়ে রোজা রাখাই উত্তম। তাহলে তৃতীয় ধাপে অবশন দিলেন যে রোজা রাখতে ও পার অথবা মিসকিন দের কে খাওয়াতে ও পার,আর এটাই হলো তৃতীয় ধাপ।

(4) চতুর্থ ধাপ হলো , আল্লাহ পাক বলেন, অর্থ (রমজান মাস যেই মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে)।

এই আয়াতে  আল্লাহ পাক বলেন

শোনো তোমরা যারা রমজান মাস পেয়ে যাও যারা সুস্থ বালেগ জ্ঞানী, সামর্থ্য বান,বা সামর্থ্য বান ছাড়া সবাইকে রোজা রাখতে হবে।

আর এই আয়াতের / কথার দ্বারা আগের সব হুকুম রহিত হয়ে যায়, অর্থাৎ আগের সব হুকুম কেন সেল হয়ে যায় 

 আর 

নতুন নিয়ম চালু হয়।


তাহলে (1) নং হলো অভ্যাসের মাধ্যমে 

(2) মহররমের দশ তারিখের রোজা রাখার আদেশ করার মাধ্যমে।

(3) রোজা রাখা ফরজ কিন্তু ছাড় দেওয়ার মাধ্যমে

(4) আম/সাধারণ ভাবে সবার উপরে ফরজ করা হয়েছে

যারা সুস্থ বালেগ জ্ঞানী।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url