যাকাত হিসাব করার নিয়ম-jakat er hisab

 যাকাত হিসাব করার নিয়ম

 যাকাত কাদেরকে দেবো ।যাকাতের টাকা পাওয়ার উপযুক্ত কারা। যাকাতের টাকা কাদের কে দিলে যাকাত আদায় হবে।

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ।

নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি আলা রাসুলিহিল কারিম, আম্মা বাদ। সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আমরা অনেকেই জানিনা মূলত কাদেরকে যাকাত দিতে হবে। কারা যাকাতের টাকা পাওয়ার অধিকার রাখে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের মধ্যে বলেন,আটটি খাতে যাকাত দেওয়া যাবে। অর্থাৎ আটটি জায়গায় যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে।

 অন্য কোথাও দেওয়া যাবে না। আসুন আমরা জেনেই



যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি

 সেই আটটি খাত কি কি?

(১) ফকির।এখন আমাদের জানতে হবে ফকির কারা? ইমাম আযম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহুর মতে ফকির হলো, যার সামান্য কিছু আছে, কিন্তু এতে তার চলে না। অথবা তার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাবেন সে লেখাপড়া করানোর খরচ টাও নাই তারাই হলো ফকির।

(২) মিসকিনদের দেওয়া যাবে।এখন জানতে হবে মিসকিন কারা? মিসকিন বলা হয় তাদেরকেই যাদের / যার কিছুই নেই। একদম নিঃস্ব। দিন আনে দিন খায় / অথবা কেউ খেতে না দিলে খাবার পায় না তারাই হলো মিসকিন।

(৩) والعاملين عليها অর্থাৎ যারা যাকাত উত্তোলনের কাজ করে বা যারা যাকাত মানুষদের কাছ থেকে আদায় করে যাকাতের ফান্ড রাখার জন্য। সেই মানুষদের বেতন যাকাত থেকে দেওয়া যাবে বা যাকাতের টাকা দিয়ে তাদের বেতন দেওয়া যাবে। আল্লাহপাক তাদেরকে এই যাকাতের টাকা থেকে বেতন দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। যদিও তারা ব্যক্তিগতভাবে ধনী হয়ে থাকে। তবুও তাদের স্যালারি টা যাকাতের টাকা থেকে দেওয়া যাবে।

(৪) ওয়া মুসলিম (বিধর্মী)যারা তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে। ইসলামের প্রতি ভালোবাসা বাড়ানোর জন্য।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: ওয়া মুসলিম(বিধর্মী) দের যাকাত দেওয়ার বিধান কিন্তু আর নেই। কারণ এই বিধানটা নবী করীম সাঃ এর যুগে যখন ইসলাম অনেক দুর্বল ছিল তখনই বিধানটা ছিল।

 কিন্তু ইসলাম যখন পরিপূর্ণ  হয়ে যায়, তখন আর এই বিধানটি বলবতো নেই।আর অধিকাংশ ফুকাহাদের এটাই মত যে অমুসলিমদেরকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে না। যদি তাদেরকে দিতেই হয় তাহলে যাকাতের টাকা ছাড়া অন্য কোন টাকা নফল দান সদকার উদ্দেশ্যে দেওয়া যাবে। বা এমনি দান করা যাবে।

(৫) দাস মুক্ত করার উদ্দেশ্যে  যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে ।একজন দাস কে মুক্ত করার জন্য আপনি কাউকে টাকা দিয়ে হেল্প করতে পারবেন বা যাকাত দিয়ে হেল্প করতে পারবেন। আর এই বিধানটিও কিন্তু এখন আর নেই কারণ এখন আর দাস-দাসী নাই। কিন্তু আবার যখন ঈসা আলাইহিস সালাম আসবেন ইমাম মাহদী আসবেন তখন যুদ্ধক্ষেত্রে আবার দাস দাসীর প্রচলন চলে আসবে। সেক্ষেত্রে ফুকাহারাগন বলেন, যেহেতু দাস দাসের প্রচলন নেই সেহেতু মুসলমানদের মধ্যে যারা নির্দোষ ভাবে জেলে আটকে আছে তাদেরকে জেল থেকে মুক্তির জন্য যাকাতের টাকা দেওয়া যেতে পারে বা দেওয়া যাবে।

(৬) কাউকে কিডন্যাপ করা হয়েছে বা ডাকাত দল ধরেছে এবং মুক্তিপণ দাবি করেছে অনেক টাকা তাহলে সে ক্ষেত্রে সেই মুক্তি পোনা আদায়ের জন্য যাকাতের টাকা দেওয়া যেতে পারে।

(৭) যারা আল্লাহর রাস্তায় আছে তাদেরকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে/যাকাত দেওয়া যাবে।যেমন যারা আল্লাহর জন্য ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে রয়েছেন। অথবা যারা এলমে দ্বীন শিক্ষা করছেন তাদেরকে। অথবা মাদ্রাসা যদি কোন লিল্লাহ বোর্ডিং থাকে তাহলে সেই বোর্ডিংয়ে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে যাকাত দেওয়া যাবে।

(৮) যারা সফরের যাওয়ার পরে সফরের টাকা শেষ হয়ে যায় বাড়ে ফেরার মত কোন অবস্থা না থাকে। আর সেই ব্যক্তি যদি বাড়িতে অনেক ধনীও হয়ে থাকে তবুও তাকে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে কারণ সফরত অবস্থায় সে অসহায়।


যাকাত কাকে বলে

যাকাত কাদের উপর ফরজ 

কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে।যাকাত কার উপর ফরজ। 

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আমরা অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে থাকি যে কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে বা কত টাকায় কত টাকা যাকাত আসে আসলেই কাদের উপরে যাকাত ফরজ,বা যাকাত দিতেই হবে, না দিলে গুনাহ হবে, এ বিষয়ে আমরা আজকে বিস্তারিত জানাবো ইনশাল্লাহ।

সম্মানিত ইসলাম প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআন এর মধ্যে বলেন

واقيموا الصلاة واتوا الزكاة واركعوا مع الراكعين

অর্থ তোমরা নামাজ কায়েম করো

 এবং যাকাত আদায় কর,এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।

 অর্থাৎ জামাতের সাথে নামাজ আদায় কর। 

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো যাকাত কাদের উপর ফরজ ।

যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে।

(১) নেসাব পরিমাণ মাল হওয়া, বা সম্পদ থাকা। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট পরিমান সম্পদ থাকতে হবে।

(২) নেশা পরিমাণ মাল বা সম্পদ পুরো এক বছর নিজের কাছে থাকা

(৩) তিন নম্বর শর্ত হচ্ছে এই সম্পদ টা নিজের হওয়া অর্থাৎ যে সম্পদে অন্য কারো ভাব নেই এমন সম্পদ হওয়া।

(৪) চার নাম্বার শর্ত হল সে সম্পর্কে আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া অর্থাৎ আপনার যাবতীয় সব খরচ বহন করার পরেও যে সম্পদ অতিরিক্ত থাকে সে সম্পদ যদি নেসাব পরিমাণ হয় তাহলে যাকাত ফরজ।

(৫) পাঁচ নাম্বার শর্ত হলো বেশি পরিমাণে ঋণ না থাকা। অর্থাৎ আপনার যে সম্পদ আছে সে সম্পদের চেয়ে বেশি যদি ঋণ থাকে তাহলে যাকাত করা যাবে না থাকে তাহলে যাকাত ফরজ। এখন আসুন আমরা বিস্তারিত  জেনে নেই।

(১) নিসাব কি এটাকে কিভাবে নির্ধারণ করবো? নিসাব কে ইসলামে দুটি জিনিস দিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বর্ণ দিয়ে। স্বর্ণের ক্ষেত্রে নেসাব হচ্ছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ যদি কারো কাছে থাকে তাহলে তিনি নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলেন।যার উপর যাকাত ফরজ।

(২) রূপ্য দিয়ে।অর্থাৎ রুপা দিয়ে।নেসাবের পরিমাণ করা হয়েছে।আর এই রুপ্য বা রুপা যদি কারো কাছে সাড়ে ৫২ তোলা থাকে তাহলে তিনি নেসাব পরিমাণের মালিক।এখন এখানে আমাদের জানার বিষয় হলো ,এক তোলা ও যাকে বলে,এক ভরি ও তাকে বলে। তাহলে বোঝা গেলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ। আর সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সারে বা ৫২ ভরি রুপা যদি কারো কাছে থাকে /সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ। বা, সাড়ে ৫২ তোলা রুপার 

মূল্য যদি কারো কাছে থাকে তাহলে বুঝতে হবে সে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।এখন এখানে আর একটা প্রশ্ন থেকে যায়  সেটা হল আমরা কোনটা করব? সারে ৫২ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দেবো। নাকি সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দেব।

কারণ স্বর্ণ আর রুপার মূল্য তো এক নয়।উত্তর হল নবী করীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর যুগে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের যে মূল্য ছিল সাড়ে ৫২ তোলা রুপার ও সেই মূল্য ছিল। তাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ ও সাড়ে ৫২ তোলা রুপার পরিমাণ সম্পদ থাকলে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হিসাব করেছেন।কিন্তু এখন যেহেতু সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ আর ৫২  তোলা রূপার মূল্য এক নয়।সেক্ষেত্রে কেউ যদি স্বর্ণ হিসেবে যাকাত দিতে চায় তাও পারবে আবার কেউ যদি রূপার হিসেবে যাকাত দিতে চাই তাও পারবে. আর রুপার হিসাবে যাকাত দিতে হলে অনেক লোক কে যাকাত দিতে হবে ফলে যারা যাকাত দিবে তারা ও উপকৃত হল ।যারা যাকাতের টাকা-পয়সা নিল তাদের ও উপকার হবে। ফলে গরীব দুঃখীদের  দুঃখ কষ্ট কমে যাবে।তাই যাদের সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ আছে উত্তম হবে তারা সেই স্বর্ণের হিসাব করে ই যাকাত দিবে।

আর যাদের সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ নাই যদি সারে ৫২ তোলা বা ভরি রুপা থাকে তাহলে সেখান থেকে যাকাত দেওয়া। 


(২) নেসাব পরিমাণ মাল এক বছর নিজের কাছে থাকা । কারো কাছে যদি যাবতীয় খরচ বাদে ই একটা বছর নেসাব পরিমাণ মাল তার নিকটে থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে।আর এক বছর হিসাব করতে হবে চন্দ্র মাস হিসেবে আর যা ৩৫৪ দিনে এক বছর হয়।হঠাৎ করে যদি কেউ কোটি কোটি টাকার মালিক হয় আর সে সম্পদ যদি তার নিকট এক বছর না থাকে এক বছরের আগেই শেষ হয়ে যায় তাহলে যাকাত দিতে হবে না।

(৩) নেসাব পরিমাণ মাল বা সম্পদ  নিজের হতে হবে, যেই মালের বা সম্পদে কারো কোন ভাগ নেই। যেখান থেকে আপনি চাইলে ই খরচ করতে পারেন।

(৪) নেসাব পরিমাণ মাল বা সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। অর্থাৎ যাবতীয় খরচ সবকিছু বাদ দিয়েও যে সম্পদ আপনার নিকট এক বছর থাকবে সে সম্পদের যাকাত দিতে হবে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বা অন্য ভরি রূপার মূল্য অনুযায়ী।

(৫) কারো কাছে ঋণ না থাকা। অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ মাল আপনার কাছে আছে ।কিন্তু কেউ যদি আপনার কাছে ঋণ পায় আর সেই ঋণের পরিমাণ যদি আপনার নেসাব পরিমাণ টাকার চেয়ে ও বেশি হয়। তাহলে ও আপনাকে যাকাত দিতে হবে না।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আজকের আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url